আদর্শ দেশপ্রেমিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
- ভূমিকা
- শিক্ষাজীবন
- কর্মজীবন
- আজাদ-হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব গ্রহণ
- জার্মানের সাহায্যে ভারতকে মুক্ত করার চেষ্টা
- উপসংহার
ভূমিকা : ‘তােমার আসন শূন্য আজি
হে বীর পূর্ণ কর’ |
নেতাজি সম্পর্কে কবি তথা সমগ্র ভারতবাসীর মনের কথা—প্রাণের কথা এটাই। উনবিংশ শতাব্দীর নগজাগৃতির প্রবাদপ্রতীম পুরুষ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সমাজ সংস্কারে আবির্ভাব ঘটেছিল রামমােহন রায় ও বিদ্যাসাগরের। জাতির ধর্মান্ধতা ও গ্লানি দূর করে তারা নতুন প্রভাত এনেছিলেন জাতির জীবনে। আবির্ভাব ঘটেছিল বঙ্কিমচন্দ্রের—‘বন্দে মাতরম’ মন্ত্রে সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিকে গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে স্থাপন করেছিলেন—আর সুভাষচন্দ্র পরাধীনতার লজ্জা ও অভিশাপকে অগ্রাহ্য করে জাতির অন্তরে সারিত করেন নতুন চেতনা, নতুন উদ্যম। সুভাষচন্দ্র জড়তাগ্রস্ত জাতিকে শােনালেন—“Give me blood, I promise you freedom' (রক্ত দাও—আমি | তােমাদের স্বাধীনতা দেব)।
Pic Source:Google |
শিক্ষাজীবন : সুভাষচন্দ্রের জন্ম হয় ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে। বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন লন্ধ প্রতিষ্ঠ ব্যবহারজীবী। মা প্রভাবতী দেবী। আশৈশব সুভাষচন্দ্র ছিলেন স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণ। ইংরেজি মাধ্যম অ্যাংলাে-ইন্ডিয়ান স্কুলে পড়াশােনা করার সময় বার বার প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রয়ােজনে স্কুল ছেড়ে ভরতি হয়েছেন অন্য স্কুলে এবং সেখান থেকেই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর ভরতি হন কলকাতায় বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু এখানে তার পড়াশােনা বেশি দিন করা সম্ভব হয়নি। ইংরেজ অধ্যাপক মি. ওটেন ভারতীয়দের অপমানকর। উক্তি করায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র তার প্রতিবাদ করেন। ফলে তাকে প্রেসিডেন্সি কলেজ। ছেড়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভরতি হতে হয়। দর্শন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স পাস করে আই. সি, এস, পড়ার জন্য বিলাত যাত্রা করেন এবং কেব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে। | ট্রাইপস ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফেরেন।
Pic Source:Google |
কর্মজীবন : সুভাষচন্দ্রের কর্মজীবন বৈচিত্র্যময়। আই. সি. এস. পাস করে সরকারি চাকুরি গ্রহণ করলেও দেশমাতৃকার টানে তা পরিত্যাগ করেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সম্পাদক থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে সভাপতি পর্যন্ত হন। কিন্তু গান্ধিজির সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটায় কংগ্রেস পরিত্যাগ করে ফরােয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন। সুভাষচন্দ্রের সাংগঠনিক ক্ষমতা ইংরেজ সরকারের আতঙ্কের কারণ হলে তিনি বার বার কারারুদ্ধ হন। ১৯২১ সাল থেকে বার বার কারাবাসে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটে। ভারতীয় তরুণ সমাজকে তিনি এক নতুন | ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। |
আজাদ-হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব গ্রহণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকারের সমস্ত | চেষ্টা ব্যর্থ করে ছদ্মবেশে পেশােয়ার সীমানা অতিক্রম করে রাশিয়া, ইতালি হয়ে জার্মানি পৌছােন। সেখান থেকে জাপানে এসে রাসবিহারী বসু ও জাপানি প্রধানমন্ত্রী তােজোর আনুকূল্যে বন্দি ভারতীয়দের নিয়ে গড়ে তােলেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হন তিনিই।
Pic Source:Google |
জার্মানের সাহায্যে ভারতকে মুক্ত করার চেষ্টা : এরপর আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের দিকে অগ্রসর হয়ে আসাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে নাগাল্যান্ডের কোহিমায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে সমর্থ হয়। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পাের্টব্লেয়ারেও আজাদ হিন্দ সরকারের পতাকা উত্তোলিত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটলে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারেনি। তবুও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার যে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন তা বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
Pic Source:Google |
উপসংহার : দেশমাতৃকার মুক্তির যে পথ তিনি বেছে নিয়েছিলেন তা আবেদন-নিবেদনের পথ নয়—সে পথ রক্তাক্ত পিচ্ছিল। তাই আবেগ সবর্ষ কতিপয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নেতাজিকে বন্দনা করলে নেতাজির আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে না। কতকগুলি রাস্তাঘাট, স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর নেতাজির নামে চিহ্নিত করলেই নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানান হবে না। তাই কতকগুলি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে নেতাজির আদর্শ বাস্তবায়িত হতে পারে তার দিকে নজর দিতে হবে। দেশের সর্বস্তর থেকে অন্যায় অরাজকতা বিদূরিত করে শােষণহীন সমাজ সৃষ্টি করতে হবে। যে সমাজে মানুষ মানুষের দাস হিসাবে পরিগণিত না হয়ে—দেশের ও দশের একজন হিসাবে পরিচিত হবে।
0 Comments