বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ । বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা | বাংলা রচনা বই | প্রবন্ধ রচনা। বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ। |

 বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ

  • ভূমিকা
  • বিজ্ঞানের অভিশাপ
  • বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ
  • বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগে মানুষের ভূমিকা
  • প্রতিকার
  • উপসংহার


ভূমিকা:

"অমৃতের পুত্র তুমি হে মানব সন্তান,

তোমাকে দিয়েছি বুদ্ধি অন্তহীন প্রাণ।

আমার সৃষ্টির ভাঙ পূর্ণ করো তুমি,

তোমার গৌরবে মুগ্ধ হোক আসমুদ্র ভূমি।"

সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে ভগবানের ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে মানুয় হয়ে উঠেছে জষ্টার প্রতিদ্বন্দ্বী। সঙ্গীর দেওয়া বাঁশকে মানুষ করেছে বাঁশি। তাঁরই দেওয়া দাঁতে মানুষ এনেছে অফুরন্ত হাসি। কবি করে ধ্বনিত হয়েছে মানুষের এই স্বীকারোতি:

আমাকে দিয়েছ কণ্ঠ আমি দেন গান

তোমার মাটিতে দেব ম্যাডোনার প্রাণ।

এভাবে আপন ঐশ্বর্য উজাড় করে দিয়ে মানুষ অজানা-অচেনাকে করেছে করতলবন্দী। মানুষের অন্তহীন প্রাণশক্তির কাছে অবনত হয়েছে মহাশূন্যের বৈচিত্র্যময় রহস্য; সপ্তসিন্ধুর বুকের বোতাম খুলে মানুষ তুলে এনেছে মহামূল্য মণিরত্ন। জীবন মৃত্যুকে জয় করে মানুষ হয়ে উঠেছে মৃত্যুঞ্জয়ী।

বিজ্ঞানের অভিশাপ: গুহা সভ‍্যতা থেকে মানুষ যেদিন আলোর তপস্যায় বেরিয়ে এল, আবিষ্কার হল আগুন- সেদিন থেকে বিজ্ঞান হল মানুষের নিত্যসঙ্গী। একের পর এক স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে মানুষের জীবনকে করে তুলল গতিময়। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ পেল বিদ্যুৎ, পেল বাতাসের গতিতে উড়বার যন্ত্র। শ্রম লাঘবের সূত্র ধরে এল নানারকম যন্ত্র। টেলিফোন, টেলিভিশন, রেলগাড়ি, বিমান সবই বিজ্ঞানের দান। এমনকি অতি সম্প্রতি যন্ত্রমানব রোবট এসে করে দিয়ে যাচ্ছে মানুষের যাবতীয় কাজ। তবুও হৃদয়-সন্ধানী মানুষ ভয়ার্তকণ্ঠে বলে উঠল-বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাই আধুনিক মানুষ আর্তকণ্ঠে আবেদন করছে 'এবার থামিয়ে দাও বিজ্ঞানের অশনি সংকেত'।

বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ: মানুষ এখন একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। মানুষের লোভ-লালসার পরিধি আকাশের উচ্চতাকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। যে বিজ্ঞান মানুষকে জড়জীবন থেকে মুক্ত করে বুদ্ধিমনস্ক করেছে, আপন স্বার্থসিন্ধির উদ্দেশ্যে সেই বিজ্ঞানকেই মানুষ ব্যবহার করেছে মারণাস্ত্র হিসেবে। পারমাণবিক বোমা এরই ফলশ্রুতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাম্রাজ্যবাদীরা এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জাপানের হিরোসিমা আর নাগাসাকিকে পরিণত করেছিল ধ্বংসস্তূপে। হাজার হাজার মানুষ হয়েছে নিহত। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে অথর্ব, পঙ্গু। মানবসভ্যতা আজও সেই কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে। যে বিজ্ঞান মানুষের জন্য তৈরি করেছিল আশীর্বাদের পরিমণ্ডল, সেই বিজ্ঞান মানুষের অপপ্রয়োগে পরিণত হয়েছে ভয়ংকর আতঙ্কে। আজও পরমাণু যুদ্ধের বিভীষিকা মানুষের সভ্যতাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। অস্ত্রধর পশ্চিম দুনিয়া দূর্বল বিশ্বকে পদানত করে রেখেছে এই জুজুর ভয় দেখিয়ে। তাদের এক পলকের অবিমৃষ্যকারিতায় যে-কোনো মুহূর্তে সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগে মানুষের ভূমিকা: স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি বিজ্ঞান মানুষের জন্য অভিশাপ? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়-না, বিজ্ঞান নয়। এর জন্য দায়ী মানুষের অশুভ বুদ্ধি। পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ শক্তিধর হতে পারে, সভ্যতার বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে, কিন্তু সেই অনন্য সম্পদকে মানুষ ব্যবহার করছে মারণ-যজ্ঞে। কীটনাশক ওষুধ তৈরি হয়েছে সবুজ বিপ্লবের উপকরণ হিসেবে। কিন্তু সেই কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে শত্রু নিধনে। নানারকম নেশার ওষুধ তৈরি হয়েছে রোগজর্জর মানুষের যন্ত্রণা উপশমের জন্য। সেই নেশাদ্রব্য দিয়ে মানুষ মানুষকে অজ্ঞান করে তার যথাসর্বস্ব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ডিনামাইট আবিষ্কৃত হয়েছে গিরিশিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ করার প্রয়োজনে। সেই ডিনামাইট ব্যবহার করে উন্মত্ত মানুষ উড়িয়ে দিচ্ছে মহামূল্যবান সড়ক সেতু।

প্রতিকার: বিজ্ঞানের অবিরাম অপপ্রয়োগ মানুষকে আজ যে সহায় সম্বলহীন করে তুলছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রয়োজনও অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এই মরণস্রোতকে আড়াল করার একমাত্র উপায় মানুষের মনে শুভবুদ্ধি সঞ্চার করা। প্রয়োজন সুচিন্তিত কর্মসূচি গ্রহণের। জড়বাদী সভ্যতার মোহ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করার জন্য চাই পরিকল্পিত শিক্ষা-প্রয়োজন সুস্থ বিনোদন, সাংস্কৃতিক বিকাশ। মনে রাখতে হবে কবির সাবধান বাণী:

" মরণ খেলা খেলছ তুমি লোভের ক্রীতদাস

এর আড়ালেই লুকিয়ে আছে করুণ ইতিহাস।

তুমি যাকে খুন করছ সে তোমারই যম,

একলা তুমি রইবে বেঁচে সেই ভরসা কম।"

উপসংহার: বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ আজ আমাদের কাছে, যতই ভয়াল হয়ে উঠুক, একদিন মানুষের শুভবুদ্ধি জাগবেই। মানুষ বুঝতে পারবে অমৃত আর গরলের ব্যবধান। মহাদেব যেমন সমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণ করেছিলেন, বিজ্ঞানের সেই অমৃত সুধা মানুষও মন্ধন করবে একদিন।

Post a Comment

0 Comments