ছাত্রজীবনে নিয়ম ও শৃঙ্খলাবােধ
- ভূমিকা
- ছাত্রজীবনের প্রকৃত দায়িত্ব
- ছাত্রজীবনে নিয়ম ও শৃঙ্খলাবােধের প্রয়োজনীয়তা
- নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা সৃথল নয়
- উপসংহার
ভূমিকা : কবি নজরুলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে—
“আমরা শক্তি, আমরা বল,
আমরা ছাত্রদল |
চিরকালই সবদেশে বিভিন্ন জাতির সামনে যখনই সংকট এসেছে, ছাত্ররাই প্রথম সেক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে দেশ গড়ার কাজে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। যুগে যুগে ছাত্রসমাজের ইতিহাসে | রয়েছে তার সাক্ষ্য। সমাজের অন্যায়, অসত্য, প্রবঞনার বিরুদ্ধে এই ছাত্রসমাজ যেমন সােচ্চার তেমনই ব্যথা-বেদনার হাহাকার, আর্ত-পীড়িতদের ক্রন্দনরােলের পাশে তাদের নির্ভীক উপস্থিতি। হৃদয়ে অসীম দুঃসাহস, বাহুতে নবীন বল, চোখে উদ্দীপনার জ্বলন্ত মশাল, বুকে | অসম্ভবকে সম্ভব করার দুর্জয় প্রতিশ্রুতি যাদের, সেই ছাত্রসমাজই জাতির শক্তি ও সম্ভাবনার প্রতীক।
Pic Source: Pixabay |
ছাত্রজীবনের প্রকৃত দায়িত্ব : জীবন-সংগ্রামে জেতার জন্য প্রয়ােজন ক্ষুরধার বুদ্ধি, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, সহিষ্ণুতা, সংযম, নিষ্ঠা ও বিনয়। সদ্গুরুর সান্নিধ্যে এসে বুদ্ধির বিকাশের জন্য | যেমন শ্রদ্ধাবান হতে হয়, তেমনই আয়ত্ত করতে হয় শৃঙ্খলাবােধ। জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করার সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতির গভীরতা বৃদ্ধিতে মনােযােগী হতে হয়। আর আদর্শের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলে দেহ-মন-চরিত্রে এক শক্তি অর্জিত হয়, যা উদ্যম ও উৎসাহের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্রে জোয়ার আনে। সুতরাং ভবিষ্যৎ জীবন-সংগ্রামে জয়ী বা প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শিক্ষক-অভিভাবকের মতাে গুরুর নির্দেশ-শিক্ষানুযায়ী এইসব মানবিক অস্ত্র এবং এর প্রয়ােগপদ্ধতি সকল ছাত্রকে অর্জন করতেই হবে। তাই শুধু শিক্ষান্তে জীবন সংগ্রাম নয়, সংগ্ৰামকরার জন্যই এখন জীবনে শিক্ষাগ্রহণ করতে হয়। আর প্রবল একাগ্রতা, নিষ্ঠা-গভীর বিদ্যার্জন ছাড়া সেই জীবনসংগ্রামে উত্তীর্ণ হওয়া যথেষ্ট কঠিন।
ছাত্রজীবনে নিয়ম ও শৃঙ্খলাবােধের প্রয়ােজনীয়তা : জীবনের প্রতিটি কাজের অনুশীলনে রয়েছে একটি ধারাক্রম, ছন্দ। সেই ছন্দই শৃঙ্খলা, যা সাফল্যের আবাহনকারী হিসাবেও উল্লেখ করা যেতে পারে। শৈশব থেকে প্রথাগত ছাত্রজীবনের শেষ ধাপ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পালন করতে হয় নানা সামাজিক দায়িত্ব। বর্তমানে, মানব-সভ্যতার চরম বিকাশের মূলে আছে। সুশৃঙ্খল-সুসংহত কর্মোদ্যোগ। যে সমাজজীবনে শৃঙ্খলা, কল্যাণ, আনন্দ শান্তি নেই, সেখানে নিরানন্দ, কল্যাণ সুষমাহীন, অশান্ত-অরাজকতায় ঘনিয়ে আসে মানবজীবনের অন্তিম লগ্ন। ছাত্রজীবনেই শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলনের উপযুক্ত সময়।
Pic Source: Pixabay |
নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা শৃঙ্খল নয় : নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবােধ জীবন গঠনের বােধনমন্ত্র তথা বেদ-মন্ত্র। কিন্তু শৃঙ্খলা যদি শৃঙ্খল হয়ে প্রতি মুহূর্তে ছাত্রসমাজের পায়ে নির্দয়ভাবে বাজে ও অগ্রগতির পথে দুর্লঙঘ্য বাধা সৃষ্টি করে, তবে জীবন কূপমন্ডুকে পরিণত হয়। দেশে দেশে, যুগে যুগে পরিলক্ষিত হয় অর্থহীন নিয়মের শৃঙ্খলে আটকে পড়ে সামাজিক প্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং জীবন পরিণত হয়েছে শুষ্ক মরুভূমিতে। সাম্প্রতিককালে দেশে-বিদেশে ছাত্রসমাজের উজ্জ্বলতায় সকলেই উদবিগ্ন; তাদের উদ্ধৃঙ্খলতার কলঙ্কিত স্বাক্ষর গড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে, বাসে-ট্রামে-ট্রেনে, পথেঘাটে, সমাজ জীবনের অলি-গলিতে। দেশব্যাপী আশাহীনতা, কুরুচি ও দুর্নীতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রভূত ছাত্রসমাজকে উহ্ঙ্খলতার পথে পরিচালিত করে।
![]() |
Pic Source: Pixabay |
উপসংহার : ছাত্রসমাজকে মনে রাখতে হবে ছাত্রজীবনই জীবন গঠনে তথা জীবন প্রস্তুতির উৎকৃষ্ট সময়। কবির ভাষায় এ হল নিঝরের স্বপ্নভঙ্গের কাল। এখানে জীবন যে পথে পরিচালিত হবে, সেই পথই হবে স্থায়ী জীবন পথ। তাই ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবােধ বা নিয়মানুবর্তিতার প্রয়ােজন অসীম। এর ফলে বর্তমানের নৈরাশ্যবােধ বা রুচি-বিকৃতি অপসারিত হয়, নতুন আশা ও আদর্শের সূর্যোদয় ঘটে। আর এরপরই আসে নতুন জীবন—নতুন প্রভাত।
“শিক্ষা কী ?
যেন পেরিয়ে আঁধার সকালবেলায়
সূর্য ওঠাটি”
ছাত্রদের এই অন্ধকার পেরিয়ে আলাের তীরে উত্তীর্ণ হতে হবে।
1 Comments
osm
ReplyDelete