আমার শহর | বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা | বাংলা রচনা বই | প্রবন্ধ রচনা|আমার প্রিয় শহর কলকাতা |

 বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমার শহর

  • ভূমিকা
  • আমার শহরের ইতিহাস ও ঐতিহা
  • শহরের বর্তমান চেহারা
  • শহরের স্রষ্টব্য অঞ্চল
  • শহরের ভালো দিক ও মন্দ দিক
  • উপসংহার
আমার শহর

ভূমিকা
: আমার প্রিয় শহর কলকাতা—পৃথিবীর কয়েকটি বৃহৎ শহরের একটি। এর পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভাগীরথী-হুগলি। এর পরপারে হাওড়া শহর। বর্তমানে এর ভূমিকা : আমার প্রিয় শহর কলকাতা—পৃথিবীর কয়েকটি বৃহৎ শহরের একটি। এর পরিধি বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে। কলকাতা কেন আমার প্রিয় শহর তা সঠিকভাবে গুছিয়ে বলতে পারব না। তবে আমার মাতৃভাষা যেমন প্রিয়, আমার জন্মভূমি যেমন আমার প্রিয়, তেমনি আমার বাসভূমি এই শহর আমার প্রিয়।
আমার শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য: প্রায় তিনশো চব্বিশ বছর আগে আমার এই প্রিয় শহরের জন্ম হয় – জন্ম হয় তিনটি গ্রামকে নিয়ে—গোবিন্দপুর, সুতানুটি ও কলকাতা কে নিয়ে। পরবর্তীকালে এর নাম হয় কলকাতা। কেউ কেউ বলে থাকেন জব চার্নক নাকি এই শহরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই এই শহর গড়ে ওঠে। কলকাতার বুকে তৈরি হলো বড়ো বড়ো ইমারত, রাস্তাঘাট, বদলে গেল সামাজিক পরিচিতি। গড়ে উঠল ব্যবসা কেন্দ্র। নানা অর্থলোভী, ক্ষমতালোভী, ভাগ্যান্বেষী লোকজনের আনাগোনা ঘটতে লাগল প্রতিদিন। ধুলো কাদা-পাড়াগাঁ, পরিচয় মুখে গিয়ে ইট-পাথর-পিচ সিমেন্টের নব সাজে সজ্জিত হলো কলকাতা।
বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ঐতিহ্য : ক্রমে ক্রমে জব চার্নকের দল গড়ে তুলল দুর্গ প্রাকার। সারা ভারতের রাজধানী রূপে স্বীকৃতি পেল কলকাতা। কলকাতার বুকে ছুটে বেড়াতে লাগল নানা গতির যান—ট্রাম, মোটর, বাস। বর্তমানে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেট্রো রেল, চক্ররেল। ১৮৫৭ সালে স্থাপিত হলো 'টাঁকশাল'। তারপর থেকেই চলেছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও শিল্প সাহিত্যের অগ্রগতি। স্থাপিত হলো এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, নানা কলেজ, থিয়েটার, মিউজিয়াম। সমবেত হলেন রবিশঙ্কর, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রামমোহন, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ মনীষী।
শহরের বর্তমান চেহারা: সময়ের ফল্গুধারা আজ অনেকটা পথ চলে বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছে। চারদিকে গড়ে উঠেছে গগনচুম্বী অট্টালিকার শ্রেণি। কলকাতাকে হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত করে হাওড়া ব্রিজ ও দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু। গড়ে উঠেছে অসংখ্য মল। রাস্তাঘাট চওড়া হয়েছে চারদিকে পরিকল্পনা মাফিক রেলিং বসেছে লাগানো হয়েছে গাছ পালা। গতি এসেছে যানবাহনে। ইস্টার্ন বাইপাসের ধারে গড়ে উঠছে নতুন নতুন হোটেল-রেস্তোরাঁ, অফিস বিল্ডিং, তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফ্লাই ওভার বেড়েছে যানবাহনের গতিবেগ।


শহরের দ্রষ্টব্য অঞ্চল: আজ কলকাতা শহরে দ্রষ্টব্য স্থানের অভাব নেই। রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, যাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি, কালিঘাটের মন্দির, দক্ষিণেশ্বর মন্দির, আলিপুরের চিড়িয়াখানা, রেসের মাঠ, রাজভবন, উত্তর কলকাতার জৈন মন্দির, বিডলা প্ল্যানেটোরিয়াম, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, রবীন্দ্র সদন, নন্দন, রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা পাতাল রেল, রাইটার্স বিল্ডিং নবান্ন আরও কত কী?
কলকাতার ভালোমন্দ : কলকাতা একটি প্রাণবস্তু শহর। এখানকার কলবোলাহল এতমুহূর্ত থেমে নেই। ভোরের আলো না ফুটতেই কলকাতার জীবন শুরু হয়ে যায়—ট্রালের ঘরঘর শব্দ – চায়ের দোকান গরম চা, বিবশার টুং টাং শব্দ। স্টেশনের পথে যাত্রীর চিড়-বাস-অটোর যাত্রী ডাকা—এ সব কিছুই কলকাতার নিজস্ব। এখানকার মানুষজন খুব সাহায্যকারী ও সমবা আবার কিছু মন্দ দিকও রয়েছে। অত্যধিক জনসমাগমে ফুটপাথ, বাসস্টপ, মলমূত্র পায়খানা হকারদের উৎপাত এসবও আছে। তবে ইদানিং কিন্তু সুলভ শৌচাগার গড়ে উঠেছে। ফুটপাথবাসীদের জন্য কিছু কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
উপসংহার: তবে কলকাতা কল্লোলিনী হবেই। নোংরা রাজনীতির কবলমুক্ত হয়ে কলকাতা হবে আদর্শ শহর, শিক্ষাদীক্ষায়, মানসিকতায়, সৌন্দর্যে, কলকাতা হয়তো একদিন লন্ডন হয়ে উঠবে। চারদিকে লাগছে রঙের প্রলেপ-ফুটপাথে বসছে রঙিন টাইলস-রোপন করা হচ্ছে নানা গাছপালা। মিছিল নগরীর বদনাম ঘুচিয়ে কলকাতা সত্যই একদিন কল্লোলিনী হয়ে উঠবে—এটা আমার স্থির বিশ্বাস।

Post a Comment

0 Comments