মানবজীবনে বিজ্ঞানের অবদান।বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা | বাংলা রচনা বই | প্রবন্ধ রচনা|

 বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মানবজীবনে বিজ্ঞানের অবদান

  • ভূমিকা
  • বিজ্ঞানের অভিযাত্রা
  • প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান
  • কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান
  • চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞান
  • উপসংহার
মানবজীবনে বিজ্ঞানের অবদান

ভূমিকা: একজন কবি সত্যই বলেছেন—

“আমরা ছিলাম আদিম মানুষ জঙ্গলেতে বাস,

খাদ্য ছিল কাঁচা মাংস বনের লতা ঘাস।

পশুর সাথে নিত্য নতুন হাজার লড়াই করে,

কোনো মতে বেঁচে থাকা বন পাহাড়ের ঘরে।

বিজ্ঞান এসে চালচিত্র পাল্টে দিল সব,

জীবন পেল নতুন মাত্রা নতুন অনুভব।”

মানুষের বুদ্ধিমনস্ক অভিযাত্রায় বিজ্ঞানই হয়েছে কালোত্তীর্ণ সঙ্গী। বলা বাহুল্য, আধুনিক মানবসভ্যতার এই উত্থান ও বিকাশ সর্বাংশেই বিজ্ঞানের দান। বিজ্ঞান বর্জিত মানবসভ্যতা বর্ণহীন, শক্তিহীন, সম্ভাবনাহীন।

বিজ্ঞানের অভিযাত্রা : একথা অবধারিত যে, আগুনের আবিষ্কারই বিজ্ঞানের প্রথম আশীর্বাদ। অগ্নি সম্পদে সমৃদ্ধ হয়ে মানুষ কৃষি-সভ্যতার করুণা পেল। কৃষি-ব্যবস্থার অনুগামী হল সঞ্চয়ের ইচ্ছে। গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বার্থ বুদ্ধিতে সঞ্জীবিত হল। এরই ফলশ্রুতিতে ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের অভিযাত্রা শুরু হল অষ্টাদশ শতকে। বিজ্ঞান গ্রহণ করল শিল্প বিপ্লবের স্থপতির ভূমিকা। বাষ্পশক্তির আনুকূল্য পেয়ে মানুষ গড়ে তুলল কলকারখানা, সমুদ্রের বুক চিরে জাহাজ চলল দূর-দূরান্তে। ঘটল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। আঞ্চলিক মানুষ পেল আন্তর্জাতিক বিচরণ ক্ষেত্র। পদাতিক মানুষ রেলগাড়ি আবিষ্কার করে দ্রুতগামী হয়ে উঠল। নানাবিধ কলকব্জা, যন্ত্রপাতির আবিষ্কার, বিদ্যুৎশক্তি, সৌরশক্তি মানুষের জীবনযাত্রায় নিয়ে এল নতুন মাত্রা।প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান: আমাদের প্রতিদিনের জীবন শুরু হয় বিজ্ঞানের আশীর্ব নিয়ে, প্রতিদিনের সমাপ্তি ঘটে বিজ্ঞানের মহিমায়। ইলেকট্রনিক ঘড়ির এলার্মে আমাদের ঘুম ভাঙে। ইলেকট্রনিক রেজারে দাড়ি কামিয়ে মানুষ চা যায়। বৈদ্যুতিক চুল্লিতে তৈরি হয়। খাবার। এরপর যে খবরের কাগজটি আমাদের সামনে গোটা দুনিয়ার চিত্র হাজির করে, সেই কাগজটি ছাপা হয়ে আসে অফসেট ওয়েব মেশিনে। আমরা স্কুল-কলেজে পড়তে যাই। আমাদের ভরসা বিজ্ঞানের বদান্যতায় পাওয়া অত্যাধুনিক সড়ক যান। এরপর সারাদিন টেলিফোন, ফ্যাক্স, ক্যালকুলেটর, টেলিপ্রিন্টার, ই-মেল, কম্পিউটার নিয়ে আমাদের কাজ। বাড়ি ফিরে আমরা টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের খবর দেখি। শেয়ার বাজার, মুদ্রা বাজারের মতিগতি বুঝে পরিচালিত হয় আমাদের ব্যাবসা-বাণিজ্য। আমরা যখন উচ্চতায় কাতর হয়ে পড়ি— বৈদ্যুতিক পাখা আর রেফ্রিজারেটরের শীতল পানীয় আমাদের উচ্চতা অপনোদন করে। এমনকি স্টিরিওতে গান শুনতে শুনতে আমরা যে ঘুমিয়ে পড়ি- সেই স্টিরিও-ক্যাসেটও বিজ্ঞানের অত্যাবশ্যক অবদান। এককথায়, আজকের মানুষ, বিজ্ঞান ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারে না।

মানবজীবনে বিজ্ঞানের অবদান


কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান : মানবসভ্যতার দ্রুত বিকাশের ক্ষেত্রে কৃষিবিপ্লব ও শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। এমন একদিন ছিল যখন গোরু-ঘোড়া লাঙল টানত। এখন জমি চাষ থেকে ফসল বপন ও রোপণ, আগাছা উৎপাটন, ফসল ঝাড়াই-মারাই সংরক্ষণ সব কাজেই বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এর ফলে উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুণ, শ্রম লাঘব হয়েছে মানুষের। সর্বোপরি জনবিস্ফোরণকে মোকাবিলা করে মানুষ সন্ধান করছে আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান: অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে বিজ্ঞানই হয়েছে মানুষের সহায়ক। কবিগুরুর ভাষায়-

"কত অজানারে জানাইলে তুমি

কত ঘরে দিলে ঠাই।

দূরকে নিকটে করিলে বন্ধু

পরকে করিলে ডাই।”

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আজ সারা বিশ্ব আমাদের ঘরের কোণে ঠাঁই পেয়েছে। উপগ্রহ যোগাযোগ। ব্যবস্থা নিমিষে যে-কোনো প্রান্তের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আসে আমাদের নাগালে। দ্রুতগামী আকাশযান--রকেট আর বিমানে চেপে আমরা রাতারাতি সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে সক্ষম।

চিকিৎসা শাস্ত্রে বিজ্ঞান: আধুনিক বিজ্ঞান তার আশীর্বাদকে সবচেয়ে বেশি বর্ধিত করেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানের নিরন্তর সাধনায় আজ বহুবিধ দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে। একদিন রোগে-শোকে মানুষ ছিল নিয়তির ক্রীড়নক। এখন মানুষই তার কল্যাণী প্রচেষ্টায় নিয়তিকে তালুবন্দি করেছে। লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছেন, সেই পথ ধরে মানুষ আবিষ্কার করেছে অসংখ্য রকম ভ্যাকসিন। এখন আর ঘাতক ব্যাধি বলে কিছু নেই। হ্যাপটাইটিস-বি-এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করে সম্প্রতি বিজ্ঞান সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে অন্য জন্তুর হৃদপিণ্ড সংযোজিত হচ্ছে মানুষের শরীরে আজ—

“ডাক্তারে ভগবানে নেইকো তফাৎ

হৃদয় পাল্টে দিয়ে করে বাজিমাৎ।"

সত্ত্বান প্রত্যাশী বন্ধ্যা মা কোলে নিচ্ছে নলজাত সন্তান। ক্লোনিং করে তৈরি হচ্ছে মানুষের অবিকল মানুষ। এককথায় বিজ্ঞানই যেন দায়িত্ব নিয়েছে মানুষকে মৃত্যুঞ্জয়ী করার।

উপসংহার : বিজ্ঞানের যান্ত্রিকতায় মানুষও যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মানুষকে বাঁচতে হলে, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে, বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগকে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরা যেন বিজ্ঞানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, নিজেরা বিজ্ঞানের ক্রীতদাসে পরিণত না হই। কবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে :

“বিজ্ঞানের টোপর পরে আমরা হব শক্তিমান,

অশুভকে পায়ে ঠেলে শুভকেই করব প্রণাম।"

বিজ্ঞান যেন আমাদের অজ্ঞান করে অন্ধকারে না ঠেলে দেয় বিজ্ঞান যেন আমাদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত করে আলোয় নিয়ে আসে।

Post a Comment

0 Comments