যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা | বাংলা রচনা বই | প্রবন্ধ রচনা|

বাংলা প্রবন্ধ রচনা

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই

  • ভূমিকা
  • মহাকাব্যিক যুদ্ধ
  • আধুনিককালের যুদ্ধের প্রকৃতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার বিষময় ফল
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তাঁর ফলাফল
  • তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা
  • উপসংহার
বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা : পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যুদ্ধ জিনিসটা মানুষের স্বভাবের মধ্যেই নিহিত। আদিম যুগে মানুষকে পশুর সঙ্গে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হয়েছে। গাছের ডাল, পাথরের টুকরো ছিল তার সেদিনকার অস্ত্র। বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক Darwin-এর 'Sur vival of the Fittest' তত্ত্বটি এ ব্যাপারে প্রণিধানযোগ্য। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে যোগ্য, তারই বাঁচার অধিকার আছে। আর এই যোগ্যতা প্রমাণের মাপকাঠি হচ্ছে যুদ্ধ : যুদ্ধের দ্বারা শত্রুকে পরাস্ত করে টিকে থাকাই জীবের তথা মানব সমাজের ধর্ম।
মহাকাব্যিক যুদ্ধ : মহাকাব্যের যুগেও যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া যায়—গ্রিক ঐতিহাসিক হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসিতে এবং বাল্মীকি ও মহর্ষি বেদব্যাসের রামায়ণ ও মহাভারতে। ট্রয় সুন্দরী হেলেনকে নিয়ে যুদ্ধ তা পরবর্তীকালে জাতীয় যুদ্ধে পরিণত হয়। রামায়ণের যুদ্ধ আর্য ও অনার্যের মধ্যে। তা অনেক সরল; কিন্তু মহাভারতের কৌরব-পাণ্ডবের যুদ্ধ ও যুদ্ধ কৌশল অনেক জটিল।
বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আধুনিককালের যুদ্ধের প্রকৃতি : আধুনিককালের যুদ্ধের প্রকৃতি প্রাচীনকালের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখন যোদ্ধার চেয়ে যুদ্ধরীতি বড়ো। এখন বীরত্ব অপেক্ষা রণকৌশল যুদ্ধজয়ের পক্ষে একান্ত দরকার। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রই যুদ্ধের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে। দুই প্রধান শক্তির মধ্যে যুদ্ধ লাগলে পরে অন্য রাষ্ট্রগুলিও মিত্রপক্ষ ও শত্রুপক্ষ হিসাবে জড়িয়ে পড়ে। এইরকম যুদ্ধের পটভূমিতেই রচিত হয়েছিল – War and Peace.'


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার বিষময় ফল: ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয়। বিশ্বের সবকটি দেশই প্রায় এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যদিও ভারতবর্ষে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হয়নি—তবুও তাকে প্রভূত ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। পৃথিবীর যারা শান্তিকামী মানুষ—যাঁরা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন, তাঁরা জাপান ও জার্মানির সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী যুদ্ধের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানান। বার্ট্রান্ড রাসেল, নাট্যকার বার্নার্ড শ, কবি রবীন্দ্রনাথ, দার্শনিক অঁমা রঁল্যা—সকলেই ধিক্কার জানান জার্মানি, জাপানের আগ্রাসন নীতিকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তাঁর ফলাফল: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে 'লিগ অফ নেশনস্' এর প্রতিষ্ঠা হয়। জার্মানিকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করে তার ওপর বিরাট আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। সব পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের চোখে সে শত্রু বলে পরিগণিত হয়। ১৯৩৯ সালে জার্মানি সব কিছু অস্বীকার করে যুদ্ধ ঘোষণা করে। হিটলারের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন আর মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদ এই যুদ্ধের জন্য দায়ী। সমগ্র বিশ্ব দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যায়—মিত্রশক্তি ও শত্রুশক্তি। মিত্রশক্তিতে যোগদান করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ। সমগ্র বিশ্বে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা সাধিত হল। আণবিক বোমার আঘাতে হিরোসিমা, নাগাসাকি ধ্বংস হয়ে গেল। বিশ্বে নেমে এল শোকের ছায়া। অর্থনৈতিক মন্দা সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করল বেকারত্ব বাড়ল—খাদ্যাভাব দেখা দিল।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক কুড়ি বছর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি হয় তবে মহাকাশ বিজ্ঞান ও ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের চেহারাই পাল্টে দেবে। সমগ্র বিশ্বে নেমে আসবে ধ্বংসের ঘনঘোর ছায়া।
উপসংহার : কিন্তু মানুষ তো মানুষের ভাই—সহোদর তুল্য; তারা সবাই বাঁচতে চায়—শাস্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে চায়। বাইরের রং বা দেশ কালের বেড়া মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে না—কারণ—

“কালো আর ধলো বাহিরে কেবল

ভিতরে সবাই সমান রাঙা।"

তাই সব মানুষ স্বপ্ন দেখে–স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাঁদে। সেদিক থেকে মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য নেই। তাই বিশ্বের প্রবল জনমতের চাপের কাছে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রকে নতি স্বীকার করতেই হবে—আজ না হলেও কাল তো বটেই।

Post a Comment

0 Comments