সর্বশিক্ষা অভিযান। বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা | বাংলা রচনা বই | প্রবন্ধ রচনা|

 বাংলা প্রবন্ধ রচনা 

সর্বশিক্ষা অভিযান

  • ভূমিকা
  • শিক্ষার বাস্তব চিত্র
  • সকলের জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
  • গৃহীত পরিকল্পনা
  • উপসংহার
সর্বশিক্ষা অভিযান

ভূমিকা : শিক্ষা কী?
যেন পেরিয়ে আঁধার সকাল বেলায় সূর্য ওঠাটি। শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যের মতোই মানুষের প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ হয় না। শিক্ষা ছাড়া শুধু ব্যক্তি জীবনই নয় সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষা ছাড়া আত্মোপলদ্ধি সম্ভব নয়। শিক্ষা মানুষকে নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আর এই কারণেই সর্বশিক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমান শিক্ষার অবস্থা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। শিক্ষা প্রসারের জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও আশানুরূপ সাফল্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশিক্ষা অভিযান

শিক্ষার বাস্তব চিত্র: পশ্চিমবঙ্গে সর্বশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এই রাজ্যে সাক্ষরতার হার ৬৯.২২ শতাংশ, হিমাচল প্রদেশে এই হার ৭৭.১৩ ভাগ, আবার কেরলে হার শতকরা ৯০.২২ভাগ। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির মাঝে স্কুল ছুট ছাত্রের জাতীয় হার ৬৮.৫৮ ভাগ। পশ্চিমবঙ্গে এই হার ৭৮.৫২ ভাগ। কিন্তু হরিয়ানায় এই হার শতকরা ৩৬.৫১ ভাগ। যদিও এই হার বিহার, উত্তর প্রদেশে অনেক বেশি, তবুও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার অবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়।
সর্বশিক্ষা অভিযান

সর্বশিক্ষা কী? এর প্রয়োজনীয়তা কী? :
শিক্ষা কেমন? দুঃখের পরে সুখের ছোঁয়া মিষ্টি লাগে যেমন? কারণ জনগণের কল্যাণের মূলপথই যে শিক্ষা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আবার পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে প্রধান বাঁধা শিক্ষার অভাব। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর লোকহিত প্রবন্ধে বলেছেন – “আমাদের ভদ্রসমাজ আরামে আছে, কেননা আমাদের লোকসাধারণ নিজেকে বোঝে নাই। এই জন্যই জমিদার তাহাদিগকে ধরিতেছে, মনিব তাহাদিগকে গালি দিতেছে, পুলিশ তাহাদিগকে শুসিতেছে, গুরুঠাকুর তাহাদের মাথায় হাত বুলাইতেছে, মোত্তার তাহাদের গাঁট কাটিতেছে, আর তাহারা কেবল সেই অদৃষ্টের নামে নালিশ করিতেছে, যাহার নামে সমন জারি করিবার কোনো জো নাই। আমরা বড়জোর ধর্মের দোহাই দিয়া জমিদারকে বলি তুমি অন্যায় করিও না – এমনি করিয়া নিতান্ত দুর্বলভাবে কতদিন কতদিক ঠেকাইব। অতএব প্রথমে দরকার লোকেদের আপনাদের পরস্পরের মধ্যে যাহাতে একটা যোগ দেখিতে পায়। অর্থাৎ তাহাদের পরস্পরের মধ্যে একটা রাস্তা থাকা চাই। সেটা যদি রাজপথ না হয় তো অন্তত গলিরাস্তা হওয়া চাই।” রবীন্দ্রনাথ লেখাপড়া শেখাকে সেই রাস্তা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন “আমি কিন্তু সবচেয়ে কম করিয়াই বলিতেছি, কেবলমাত্র লিখিতে পড়িতে শেখা। তাহা কিছু লাভ নহে তাহা কেবলমাত্র নাস্তা – সেও পাড়াগায়ে মেটে রাস্তা। আপাতত সেই যথেষ্ট – কেননা এই রাস্তাটা না। ইলে মানুষ আপনার কোণে আপনি বন্ধ হইয়া থাকে”।
সর্বশিক্ষা অভিযান

সর্বশিক্ষা অভিযানে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের সব রাজ্যেই সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ৬ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত সব শিশুরই শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার চেষ্টা করে চলেছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার খুব কম নয় তবুও একথা স্বীকার করতেই হবে যে পূর্ণ সাক্ষর করতে না পারলে ওই সাক্ষরতার কোনো মূল্য নেই। সরকারি পক্ষ থেকে সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করবার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার উপকরণ তৈরির জন্য বিদ্যালয়গুলিতে ৫০০টাকা করে অনুদান দেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার বই-এর জন্য ১০,০০০ টাকার অনুদানে বুকব্যাংক গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া যেসব ছেলেমেয়েরা মাঝপথে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে, যারা কখনও বিদ্যালয়ে যায়নি- এমন ছেলেমেয়েদের জন্য একটা পাঠক্রম চালু করা হয়েছে, যাতে তারা শিক্ষার নিয়মানুগ পাঠক্রমের সাথে সংগত রাখতে পারে। মেয়েদের শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করার জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
উপসংহার : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্ধশতাব্দী কাল অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এই সুদীর্ঘ সময়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার আলোক আজও সম্পূর্ণ ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। বিগত প্রায় ছয় দশকে শিক্ষার কিছু অগ্রগতি হলেও অনেক অঞ্চলেই এখনও বিদ্যালয় পর্যন্ত নেই। এ ব্যাপারে UNESCO এগিয়ে এসেছে।

Post a Comment

0 Comments