বাংলা প্রবন্ধ রচনা
সর্বশিক্ষা অভিযান
ভূমিকা : শিক্ষা কী?
যেন পেরিয়ে আঁধার সকাল বেলায় সূর্য ওঠাটি। শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যের মতোই মানুষের প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ হয় না। শিক্ষা ছাড়া শুধু ব্যক্তি জীবনই নয় সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষা ছাড়া আত্মোপলদ্ধি সম্ভব নয়। শিক্ষা মানুষকে নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আর এই কারণেই সর্বশিক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমান শিক্ষার অবস্থা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। শিক্ষা প্রসারের জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও আশানুরূপ সাফল্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষা কেমন? দুঃখের পরে সুখের ছোঁয়া মিষ্টি লাগে যেমন? কারণ জনগণের কল্যাণের মূলপথই যে শিক্ষা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আবার পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে প্রধান বাঁধা শিক্ষার অভাব। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর লোকহিত প্রবন্ধে বলেছেন – “আমাদের ভদ্রসমাজ আরামে আছে, কেননা আমাদের লোকসাধারণ নিজেকে বোঝে নাই। এই জন্যই জমিদার তাহাদিগকে ধরিতেছে, মনিব তাহাদিগকে গালি দিতেছে, পুলিশ তাহাদিগকে শুসিতেছে, গুরুঠাকুর তাহাদের মাথায় হাত বুলাইতেছে, মোত্তার তাহাদের গাঁট কাটিতেছে, আর তাহারা কেবল সেই অদৃষ্টের নামে নালিশ করিতেছে, যাহার নামে সমন জারি করিবার কোনো জো নাই। আমরা বড়জোর ধর্মের দোহাই দিয়া জমিদারকে বলি তুমি অন্যায় করিও না – এমনি করিয়া নিতান্ত দুর্বলভাবে কতদিন কতদিক ঠেকাইব। অতএব প্রথমে দরকার লোকেদের আপনাদের পরস্পরের মধ্যে যাহাতে একটা যোগ দেখিতে পায়। অর্থাৎ তাহাদের পরস্পরের মধ্যে একটা রাস্তা থাকা চাই। সেটা যদি রাজপথ না হয় তো অন্তত গলিরাস্তা হওয়া চাই।” রবীন্দ্রনাথ লেখাপড়া শেখাকে সেই রাস্তা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন “আমি কিন্তু সবচেয়ে কম করিয়াই বলিতেছি, কেবলমাত্র লিখিতে পড়িতে শেখা। তাহা কিছু লাভ নহে তাহা কেবলমাত্র নাস্তা – সেও পাড়াগায়ে মেটে রাস্তা। আপাতত সেই যথেষ্ট – কেননা এই রাস্তাটা না। ইলে মানুষ আপনার কোণে আপনি বন্ধ হইয়া থাকে”।
উপসংহার : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্ধশতাব্দী কাল অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এই সুদীর্ঘ সময়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার আলোক আজও সম্পূর্ণ ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। বিগত প্রায় ছয় দশকে শিক্ষার কিছু অগ্রগতি হলেও অনেক অঞ্চলেই এখনও বিদ্যালয় পর্যন্ত নেই। এ ব্যাপারে UNESCO এগিয়ে এসেছে।
0 Comments