দেহদান, চক্ষুদান, একটি মানবিক কর্তব্য| বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা | বাংলা রচনা বই | প্রবন্ধ রচনা|

বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দেহদান, চক্ষুদান, একটি মানবিক কর্তব্য

  • ভূমিকা
  • দেহদান ও চক্ষুদান কী এবং কেন?
  • দেহদান ও চক্ষুদানের গুরুত্ব
  • দেহ ও চক্ষুদানের পক্ষে বাধা বিপত্তি
  • নাগরিক ও মানবিক কর্তব্য
  • উপসংহার

দেহদান, চক্ষুদান, একটি মানবিক কর্তব্য

ভূমিকা : মানুষ অমর নয়— মরতে তাকে একদিন হবেই। কিন্তু সে অমরত্ব লাভ করতে পারে মানুষের মাঝে বেঁচে থেকে। সে যদি মৃত্যুর আগে অঙ্গীকার করে যায় যে তার মৃত্যুর পরে তার চক্ষু ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হবে—তবে সেই সমস্ত মানুষের মধ্যে সে বেঁচে থাকবে—তার চোখ দিয়ে অন্ধ দেখতে পাবে—তার কিডনি দিয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষ আবার নতুন জীবন লাভ করতে পারবে। কারণ ডাক্তারি শাস্ত্রে আজ আর অসম্ভব বলে কিছু নেই—

ডাক্তার ভগবানে নেইকো তফাৎ

হৃদয় পালটে দিয়ে করে বাজিমাৎ।

দেহদান ও চক্ষুদান কী এবং কেন? মৃত্যুর পর মানুষের শরীর পঞ্চভূতে লীন হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলে মানব দেহ আর পুড়িয়ে বা সমাধিস্থ না করে বহুদিন রক্ষা করা যায়। পরে তা মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করে মানুষকে নবজীবন দেওয়া যায়। তাই মৃত্যুর পর দেহদান ও চক্ষুদানের জন্য প্রচার করা একান্ত প্রয়োজন।


দেহদান ও চক্ষুদানের গুরুত্ব: যাদের চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গেছে, যারা অন্ধ, তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবার জন্য প্রয়োজন হয় চক্ষু। তাই চোখ যদি মৃত্যুর পর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে তা জীবিত ব্যক্তির পক্ষে নতুন করে আলো দেখার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া দেহদান করলে সেই দেহ নিয়ে চিকিৎসকের কাজে পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ থাকে। কিন্তু দেহগুলি পুড়িয়ে দিলে বা সমাধিস্থ করলে এর কোনো সুযোগ থাকে না।
দেহ ও চক্ষুদানের পক্ষে বাধা বিপত্তি : আমাদের সমাজ নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের দারুণ অগ্রগতি সত্ত্বেও মানুষ আজও নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। সেই কুসংস্কারের গণ্ডি কেটে বেরিয়ে আসতে মানুষ পারে না। সেইসঙ্গে যিনি দেহ বা চক্ষুদান করবেন তিনিও যেন পরিবার পরিজনকে এব্যাপারে সচেতন করে যান। পরিবারের অন্যান্যরা যেমন বিশ্বাস করেন যে দেহদান বা চক্ষুদান করলে পরলোকে বা পরজন্মে কোনো অসুবিধা হয় না। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় সেগুলিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

দেহদান, চক্ষুদান, একটি মানবিক কর্তব্য

নাগরিক ও মানবিক কর্তব্য: সব দানই মহত্বের। পুষ্প যেমন নিজের জন্য ফোটে না। অপরের জন্যই তার হৃদয় বিকশিত করে, তেমন মানুষের উচিত নিজের জীবনকে অপরের কল্যাণার্থে উৎসর্গ করা। তাই মানুষ যদি মৃত্যুর পর তার দেহ ও চক্ষুকে অপরের জন্য দান করতে প্রতিশ্রুত হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা মানব সমাজের উপকারে আসে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। মৃতদেহ থেকে চক্ষু তুলে নিলে তা তার প্রিয়জনের কাছে আতঙ্কের বিষয় হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে ওই স্থানে ডাক্তার অস্ত্রোপচার করে এমনভাবে চোখটিকে সঞ্চারিত করে দেন, বোঝার উপায় থাকে না। বরং ওই চোখটি দ্বারা অন্য একটি দৃষ্টিহীন মানুষ পৃথিবীর আলো দেখতে পায়। পুড়িয়ে ফেললে বা সমাহিত করলে তা আর কোনো কাজে লাগে না। কিন্তু ওই চোখ যদি অন্য জনের কাজে লাগে তাহলে মরণের পরেও সে অমর হয়ে থাকবে। আমাদের রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও ভূমি রাজস্ব মন্ত্রী বিনয়। চৌধুরী তাঁদের মরোনোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করে মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করে গেছেন।


উপসংহার : সমাজে এ ব্যাপারে আমাদের সকলেরই একটা কর্তব্য আছে—যা আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না। চক্ষুদান ও দেহদানকে বেশি কার্যকরী করে তুলতে হবে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচার কাজ চালাতে হবে। মানুষের মনে বিশ্বাস জাগাতে হবে যে দেহদান বা চক্ষুদান দেহের কোনো বিকৃতি ঘটায় না বা পরজন্মে কোনোরূপ দেহ বিকৃতির কারণ হয় না। মানুষ মৃত্যুর পর আদৌ জন্মায় কিনা তার কোনো প্রমাণ নেই। জাতিস্মর আছে কিনা তাও প্রমাণ সাপেক্ষ। তাই মানবের কল্যাণের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে- জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সামান্য চেষ্টায় হাজার হাজার মানুষ আবার তাদের দৃষ্টি ফিরে পেতে পারবে— রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে। এ ব্যাপারে ছাত্রসমাজকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।

Post a Comment

0 Comments