শিশু শ্রমিক সমস্যা ও শিশু দিবস।বাংলা রচনা। বাংলা রচনা লিখন।বাংলা প্রবন্ধ।

 বাংলা রচনা

শিশু শ্রমিক সমস্যা ও শিশু দিবস

  • ভূমিকা
  • শিশু দিবসের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য ও শিশুশ্রমিক
  • উপসংহার
শিশু শ্রমিক সমস্যা

ভূমিকা : আধুনিককালের কোনো এক কবি বলে গিয়েছেন— ‘ঘুমিয়ে আছে, শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে? -অথচ আমরা সে কথা ভুলে গিয়ে আজ তাদেরই শ্রমিক শ্রেণিতে পরিণত করে অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নিচ্ছি। আমাদের যে একটি সামাজিক দায়িত্ব আছে; আমরা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছি। আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত ছিল পৃথিবীকে জন্মাল মুক্ত করে নবজাতকদের বাসের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। কবি সুকান্ত বলেছিলেন—

"যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল

এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি।”

কিন্তু সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব কবির হাতে ন্যস্ত নয়। আমরা যা কিছু চর্মচক্ষে দেখতে পাই না-কবি মর্মনেত্রে তা দেখতে পান। তাই সহজেই তারা ভবিষ্যতের পথনির্দেশ করতে পারেন। সে দায়িত্ব দেশের সরকারের প্রতিটি সুনাগরিকের। তাই নাগরিক হিসাবে আমরা আমাদের সেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না।


শিশু দিবসের প্রেক্ষাপটে: পৃথিবী আজ সমস্যা জর্জরিত। স্বাস্থ্য-সমস্যা, পুষ্টি সমস্যা, শিক্ষা-সমস্যা, দারিদ্র্য-সমস্যা, প্রতিবন্ধী-সমস্যা, বাস্তু-সমস্যা, পণপ্রথা, বধূ হত্যা, নারী নির্যাতন, ঘৃণহত্যা, আরও অসংখ্য সমস্যায় পৃথিবী আজ সমস্যা সংকুল হয়ে উঠেছে। এই সমস্ত সমস্যার মতো শিশু শ্রমিক সমস্যাও একটি সমস্যা। এই সমস্যার কথা মনে রেখেই রাষ্ট্রপুঞ্জ ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দকে শিশুবর্ষ হিসাবে পালন করেছে। সেই সময় থেকে ভারতবর্ষেও শিশুপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্ম দিবসটি (১৪ নভেম্বর) শিশু দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, শিশুদের জন্য চাই স্বাস্থ্য, শিশুদের জন্য চাই শিক্ষা—তাদের নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে—ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের হারানো শৈশব—আরও কত কী শুনতে পাই, কাগজে দেখতেও পাই। কিন্তু বাস্তবে কিছু হচ্ছে না।
দরিদ্র ও শিশুশ্রমিক : আমাদের দেশে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল সীমাহীন দারিদ্র্য। আর এই সীমাহীন দারিদ্র্যই তাদের স্কুল কলেজের চৌকাঠ পার হবার সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র পরিবারের পিতা-মাতার কাছে লেখাপড়া শেখার অর্থই সময় নষ্ট করা। তার চেয়ে কলকারখানায় কাজ করে দুটো পয়সা রোজগার করলে সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আসে। তাই শৈশবের গণ্ডি পার হবার বহু আগেই তাদের জীবন কলকারখানার যন্ত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। সামান্য পারিশ্রমিকে তারা বিড়ির কারখানায়, বাজির কারখানায়, হোটেল রেস্তোরায়, গৃহস্থালির কাজে, বাড়ির কাজে, বাড়ি তৈরির জোগাড়ে হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়। শৈশবের দিন তাদের আনন্দ-হাসিতে পরিণত হয়ে উঠতে পারত, তা কলকারখানায় কালো ধোঁয়ায় অস্পষ্ট আবছা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গ্রাসাচ্ছাদনের তাগিদে কান্নায় পর্যবসিত হয়। ভারতবর্ষে শিশু শ্রমিকদের অধিকাংশেরই বয়স ১০ বছরের নীচে এবং এদের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ। এদের মধ্যে যাট শতাংশ কাজ করে কলকারখানায়, বাকি বত্রিশ শতাংশ কাজ করে হোটেল বা রেস্তোরাঁয়। বাকিরা ঘর গৃহস্থালিতে চাকর হিসাবে ফাই-ফরমাস খাটে। সরকার নড়ে চড়ে বসেছেন আর এই কারণেই ৮৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু কল্যাণের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপসংহার: ভারতের জাতীয় সরকার সম্প্রতি ২০ লক্ষ শিশুর জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এই প্রকল্পে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকেও লক্ষ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ঘোষণা যেন শুধুমাত্র ঘোষণাতেই ফাইল বন্দি হয়ে না থাকে। বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে গোটা সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। শিশুশ্রমিকদের আবার একটা .সুস্থ শৈশব ফিরিয়ে দেবার চেষ্টায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আশার কথা ১০ অক্টোবর ২০০৬ শিশুশ্রমিক বিরোধী আইন পাশ হয়েছে। কিন্তু আইন করে এই সমস্যার সমাধান কতটুকু হবে ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।

Post a Comment

0 Comments