সমাজের কল্যাণার্থে ছাত্রসমাজের অবদান
- ভুমিকা
- ছাত্রসমাজের সামনে বিস্তৃত কর্মীক্ষেত্র
- ভারতের ছাত্রসমাজ ছাত্রসমাজ ও সমাজসেবা
- উপসংহার
ভূমিকা : মানুষ নিজেদের জীবনের প্রয়ােজনে, সমাজ গড়েছিল। তখন থেকে ব্যক্তির আশা-আকাঙক্ষা, সুখ-দুঃখ ব্যক্তির নিজস্ব থাকল না। তা হয়ে উঠল সমাজের। আর সেই সমাজের একটি বৃহৎ অংশ হল ছাত্রসমাজ। তাদের মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। সেই শক্তিকে যথার্থভাবে প্রয়ােগ করার জন্য চাই সঠিক নেতৃত্ব। যােগ্য নেতৃত্বই এই ছাত্রসমাজকে নতুন কল্যাণব্রতে উদ্দীপিত করতে পারে। কিন্তু সেই যােগ্য নেতৃত্বই আজ সমাজজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কিছু স্বার্থান্ধ মানুষের জন্য আজ ছাত্রসমাজ পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। এছাড়া দলীয় নেতাদের স্বার্থসিদ্ধি আজকের ছাত্রসমাজকে করছে বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট।
Pic Source:Pixabay |
ছাত্রসমাজের সামনে বিস্তৃত কর্মীক্ষেত্র : আজকের ছাত্র সমাজের সামনে বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র । পড়ে আছে। তাদের সামনে সমাজসেবার উপযােগী নানা পথ খােলা আছে। এখনও সমাজে অশিক্ষা-কুশিক্ষার অন্ধকারে পড়ে আছে মানুষ, সমাজে চলছে নানারকম ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। চলছে সংস্কারের পরিবর্তে কুসংস্কারের দৌরাত্ম, অমানবিক শােষণ। এখনও অসংখ্য মানুষ অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটায়। বেকার সমস্যা আজকের সমাজে এক বিশেষ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতার বীজ সমাজে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রকৃতির বিরুপতায় সমাজে কখনাে কখনাে অমানিষার মেঘ নেমে আসে। রােগ-মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ দিশেহারা। এইসব বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রে ছাত্রদের নিয়ােজিত হতে হবে।
ভারতের ছাত্রসমাজ : ছাত্ররাই ভবিষ্যৎ জীবনের রুপকার। ছাত্ররাই সমাজের বুকে নানা অশাজির বীজ উপড়ে ফেলে শান্তির বীজ বপন করে। কিন্তু ভারতবর্ষের আজকের সমাজব্যবস্থায় ছাত্ররা কখনও কখনও হয়ে গড়ে উছুল, আদর্শভ্রষ্ট। আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ বতাে অসহায়। ঘরে নেই ভালােবাসা, বিদ্যালয়ে নেই সঠিক শিক্ষার পদক্ষেপ, শুধু শাসনের ভয়। ভৎসনা আর উপেক্ষায় ছাত্রসমাজ আজ কোণঠাসা, তাই তাদের জীবনে আজ অন্তর্দাহহৃদয়কে কুরে কুরে খাচ্ছে। তাদের শক্তি বল কেড়ে নিচ্ছে আজকের সমাজ।
Pic Source:Pixabay |
ছাত্রসমাজ ও সমাজসেবা : আজকের ভারত অভাব-অভিযােগে জর্জরিত, অশিক্ষা কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত। দেশের অনেক মানুষ এখনও নিরক্ষর এবং অনেক লােক দারিদ্র্য সীমার নীচে। এছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার। ভূমিহীন চাষি, গৃহহীন ছন্নছাড়া মানুষ ও নগ্ন ক্ষুধার্তদের দীর্ঘশ্বাসে ভারতের আকাশ-বাতাস থমথমে। স্বাস্থ্যহীন, আশাবিবর্জিত ও আনন্দরিক্ত মানুষ বেচে আছে শুধু বাঁচার তাগিদে। এদিকে শােষণ দিনের পর দিন উর্ধ্বমুখী। বক্তৃতার ফুলঝুরি যত বাড়ছে, সাধারণ মানুষের দুঃখও তত চরমে উঠছে। শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস, ভাঁওতা আর ভাওতা। এমন দিনে ছাত্রসমাজ কি নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবে? তারা শুধু দর্শক সেজে তামাশা দেখবে? নিশ্চয়ই নয়। আজ সকলের আগে দরকার শােষিত মানুষকে তাদের লানা ও বনা সম্বন্ধে অবহিত করা। ছাত্র সমাজ এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে। রাতারাতি বিদ্রোহ বিপ্লবের আগুন জ্বালাবার দরকার নেই, মানুষকে বুদ্ধি জুগিয়ে তাদেরকে সঠিক পথে চালানাে করানােই হবে ছাত্রসমাজের মুখ্য কাজ।
Pic Source:Pixabay |
উপসংহার : ভারতবর্ষের মতাে বিশাল দেশে সমস্যা প্রচুর। রাষ্ট্র বহুবিধ সমাধান করতে উদ্যোগী হলেও, সব সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সমাজসেবায় বর্তমান ছাত্র তরুণ সমাজের দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করতে হলে সর্বাগ্রে তাদের মধ্যে সুস্থ মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এটক উপলব্ধি—তাদের হওয়া চাই যে, পরানুকরণ নয়, পরমুখাপেক্ষিতাও নয়, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে সৎ চিন্তা ও সৎ আদর্শের পরিপােষণই হল সত্যিকারের মনুষ্যত্ব।
0 Comments